আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» বগুড়া সান্তাহারে টিকিট কাউন্টার থেকে মাদকসেবীর  লাশ উদ্ধার «» বাইরে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢোকানোর সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও এজেন্ট আটক «» শমশেরনগর হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করলেন ইংল্যান্ড প্রবাসী শিবলী আহমেদ চৌধুরী «» মৌলভীবাজারে বিসমিল্লাহ ইউকে চ্যারিটি সংগঠনের ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত «» আজ জুড়ি উপজেলা নির্বাচন- নির্বাচন ঘিরে উৎফুল্ল বিএনপি নেতাকর্মীরা  «» বগুড়ায় মজুরি বৈষম্যের শিকার  নারী শ্রমিকরা «» কমলগঞ্জে ঐতিহাসিক উসমানগড় মাঠে সরকারি ভূমি দখলের হিড়িক «» বিসমিল্লাহ ইউ,কে চ্যারিটি সংগঠনের উদ্যোগে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত «» মৌলভীবাজারে বড়কাপন সৈয়দবাড়ী জামে মসজিদ সম্প্রসারণ ও পুননির্মাণে মুক্ত হস্তে দান করার আহবান «» সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদে পদায়ন হয়েছেন চৌধুরী মামুন আকবর

শ্রীমঙ্গলে বিদেশে পাঠানোর নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র

সালেহ আহমদ (স’লিপক):

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের শংকরসনা গ্রামের হেদায়েত উল্লার ছেলে রুবেল মিয়া কাছ থেকে ওমানে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তিন লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে একই উপজেলার সিন্দুরখান ইউপির কামারগাঁও গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে হারুন মিয়া, মাসুক ও তার সহযোগীরা।

ভুক্ত ভোগী রুবেল মিয়া বলেন, আমাদের পাশের বাড়ির আছকির মিয়ার ছেলে বাছির মিয়ার কথা মতো কলেজ রোড শাহ্ মোস্তফা ট্রাভেলস এর মালিক মাসুকের সাথে কথা বলি। মাসুক মিয়া আমাকে বলেন, তিন মাসের মধ্যে ওমান পাঠাবেন। সেখানে আমার চাকরি হবে কফিশপে। প্রতিদিন ১০ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে। তার বিনিময়ে দিতে হবে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।

আমি জমিজমা বিক্রি করে টাকা জোগাড় করি। জুন মাসের শেষের দিকে এক লক্ষ টাকা, জুলাই মাসের ১ তারিখে ৫০ হাজার টাকা, জুলাই মাসের ২৬ তারিখ ১ লক্ষ টাকা এবং আগষ্ট মাসের ৩০ তারিখ আরও ৫০ হাজার টাকা সহ মোট চার কিস্তিতে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আমি পরিশোধ করি।

আমার কাছে মাসুক মিয়ার লিখিত ডকুমেন্টস রয়েছে। তিন মাসের কথা বললে সেখানে ছয় মাস অতিক্রম হলেও সে আমাকে বিদেশ পাঠায় নি। তারপর আমি ও আমার পরিবার চাপ দিলে শাহ্ মোস্তফা ট্রাভেলস এর মালিক মাসুক মিয়া বাছির মিয়ার মাধ্যমে আমাকে একটি জাল ভিসা প্রদান করে।

এছাড়াও মাসুক মিয়া এবং ওমান প্রবাসী হারুন মিয়া দুই ভাই মিলে নতুন ফাঁদ তৈরি করে তারা সুকৌশলে। একই উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের মন্দিরগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারের ছেলে জুবায়ের মিয়াকে বিদেশে নেন হারুন মিয়া।

জুবায়েরের মা বলেন, আমাকে দীর্ঘদিন ধরে মাসুক মিয়া ও তার ভাইয়ের স্ত্রী ববি বেগম বলে আসছেন আমাদের কাছে ভালো ভিসা আছে। ববি আরো বলেন, আপনাদের কোন চিন্তার কারণ নাই। ওমানে আমার স্বামীর কোম্পানির পাশেই একটি কপি শপে তার চাকরি হবে, তার জন্য আপনাদেরকে দিতে হবে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। সেখানে বেতন হবে বাংলার ৩০ হাজার টাকা। তাকে দেখা শুনার জন্য তো আমার স্বামী রয়েছেন।

ববি ও মাসুকের ফাতা ফাঁদে পা দিয়েই আজ সর্বহারা আমরা। তাদের কথা মতো আমরা মাসুক ও ববির কাছে মোট ছয় বারে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দেই এবং বাকি ২০ হাজার টাকা বিদেশ গিয়ে দিবো বলে কথা দেই। আমার ছেলে জুবায়েরকে বিদেশ যাত্রার ১০ দিনের মধ্যেই মেডিকেল ও বতাখা করে দিবেন কিন্তু আমার ছেলে আজ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওমানে অবস্থান করছে। তার মেডিকেল ও বতাখার লাগিয়ে দেয়নি। সে ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেনা। তার সাথে কথা ছিলো বিদেশ যাওয়ার পরে খাওয়া এবং থাকা সব কিছু হারুন বহন করবে।

এই বিষয়গুলো আমার ছেলে আমাদের সাথে শেয়ার করলে আমি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সেখানে হারুন, মাসুক, সুজন ও হারুনের স্ত্রী ববিকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা করা করি। থানার এসআই সজীব চৌধুরী মাসুক, হারুনের স্ত্রী ববি ও সুজনকে থানায় ডেকে আনলে তারা তিনজন মিলে স্ট্যাম্পে একটি লিখিত দিয়ে যায়। তারা ২০ দিনের মধ্যে জুবায়ের এর বিষয়টি সমাধান করে দিবেন। কিন্তু ২০ দিন পার হয়ে গেলেও তারা আমার ছেলের বতাখা মেডিকেল করে দেয়নি।

হারুন এবং মাসুকের বাড়িঘরের অংশ বিক্রি করে পালিয়ে যায়। এছাড়াও মানুষের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে। মাসুক বর্তমানে পলাতক রয়েছে। আমার ছেলের বতাখা না থাকার কারণে সে দেশেও আসতে পারতেছে না। খুবই কষ্টের জীবনযাপন করছে।

ভূক্তভোগী কামারগাঁও গ্রামের জুনায়েদ মিয়া বলেন, আমার ভাই আব্দুল মুমিনকে প্রায় ৮ মাস আগে মাসুকের মাধ্যমে উমান পাঠাই। ভিসা বাবদ আমি ৩ লক্ষ টাকা তাদেরকে দেই। একটি কোম্পানির ক্লিনার হিসাবে আমার ভাই কাজ করবে কথা ছিলো। কিন্তু আমার ভাই এখনো কাজ পায়নি। হারুন ও মাসুক বিভিন্ন দেশে বেশির ভাগ অবৈধভাবে লোক পাঠিয়ে প্রচুর টাকা লোপাট করছে।

এছাড়াও সে বহু লোকের কাছ থেকে বিদেশের যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেক টাকা আত্মসাৎ করছে। তার কাছে বহুলোক প্রতারনার শিকার হয়েছে । তাদেরকে শাস্তির আওতায় নেওয়া হোক। আমার সাথে যে রকম হয়েছে আর কারও সাথে যেন এমন না হয় এবং আর কোন সাধারণ মানুষ যেন তার ফাঁদে না পরে। তাকে যেন সঠিক বিচারের আওতায় নেওয়া হয় ও দ্রুত শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আরো অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন। তারা মানুষকে বিদেশের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে। মাসুক, হারুন, ববি পলাতক থাকায় তাদের আরেক ভাই আশিকুর রহমান সুজনকে মামলায় জড়িয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতারণা মামলার আসামি করে। সেই মামলার মৌলভীবাজার আদালতে আশিকুর রহমান সুজন গেলে গত ৩০ নভেম্বর তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন বিজ্ঞ আদালত।

শাহ্ মোস্তফা ট্রাভেলস এর মালিক মাসুকের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায়, আমার উপর আনিত অভিযোগ সবগুলো সত্য নয়। আমি এখানে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছি। আমার বড় ভাই ওমানে প্রবাসী হারুন মিয়া আমাকে দিয়ে মানুষের সাথে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা বলাতো এবং সে বিদেশে থেকে কাস্টমারের সাথে কথা বলতো। টাকা পয়সা মানুষ যে আমাকে দিতো সব আমি উনার একাউন্টে পাঠিয়ে দিতাম। অনেকেই টাকা দিয়েছেন কিন্তু তাদেরকে বিদেশ নেয়া হয়নি।

আমার ভাই হারুনকে জিজ্ঞাস করলে সে বলে হবে আজ কাল, পরশু। বিদেশ যাওয়ার পরে মানুষ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে এবং আমাকে তাদের পরিবার সমস্যার কথা অবগত করলে আমি আমার ব্যক্তিগতভাবে এক দুই মাসের বেতন প্রদান করি। পরিশেষে মানুষের চাপে ও ভয়ে ট্রাভেলস ছেড়ে বাড়িঘর বিক্রি করে দিয়েছি।